বিশ্বের একমাত্র ভাসমান পার্ক || Only floating Park in the World || UNESCO World Heritage Sites

          

 বিশ্বের একমাত্র ভাসমান পার্ক

          কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যান (কেইবুল লামজাও লিপাক্কি লাম্পাক) উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যের বিষ্ণুপুর জেলার একটি জাতীয় উদ্যান। এটি 40 বর্গ কিমি (15.4 বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে রয়েছে, এটি বিশ্বের একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান এবং লোকটাক হ্রদের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।কেইবুল লামজাও সংরক্ষণ এলাকা প্রাকৃতিক প্রাচীনতা, বৈচিত্র্য, সৌন্দর্য এবং মানব স্নেহের একটি অসাধারণ গল্পের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি বর্তমানে "কেইবুল লামজাও সংরক্ষণ এলাকা, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলির অস্থায়ী তালিকায় রয়েছে৷

জাতীয় উদ্যানের বৈশিষ্ট্য হল ভাসমান পচনশীল উদ্ভিজ্জ উপাদান যাকে স্থানীয়ভাবে ফুমদি বলা হয় (একটি মণিপুরী শব্দ যার অর্থ মাটি ও গাছপালা-র ভাসমান মাদুর)। কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যানের অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়, এবং এটিকে প্রায়ই "ভারতের সুইজারল্যান্ড" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। পূর্ব।" এই সুন্দর ভাসমান পার্কটি ইকো-ট্যুরিজমের জন্য একটি সম্ভাব্য সম্পদ কারণ এটি স্থানীয়দের জন্য রাজস্ব তৈরি করে। এটি 1966 সালে বিপন্ন 'এলক হরিণের' প্রাকৃতিক আবাস সংরক্ষণের জন্য একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল। এটি 1977 সালে একটি জাতীয় উদ্যান হিসাবে গেজেটেড হয়েছিল।

         পার্কটি লোকটাক হ্রদের দক্ষিণ-পূর্ব তীরে জৈব ধ্বংসাবশেষ এবং জৈববস্তু এবং মাটির কণার সাথে ফুমডিস নামক একটি কঠিন আকারে ঘনীভূত হওয়ার ফলে গঠিত গাছপালা ভাসমান একটি জলাভূমি। মোট পার্ক এলাকার দুই-তৃতীয়াংশ থেকে তিন-চতুর্থাংশ ফুমদি দ্বারা গঠিত। পার্কের মধ্য দিয়ে একটি জলপথ লোকটাক হ্রদের মধ্য দিয়ে উত্তরে পাবোট হিল পর্যন্ত নৌযানের মাধ্যমে সারা বছর প্রবেশাধিকার প্রদান করে। পার্কের সংরক্ষিত এলাকা ছিল 4,000 হেক্টর (9,884.2 একর)। জলাভূমি তিনটি পাহাড়, পাবোট, তোয়া এবং চিংজাও নিয়ে গঠিত যা বর্ষাকালে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আশ্রয় দেয়। পার্কের স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রকৃতি হল যে এটি "জলভূমি হতে খুব গভীর, একটি হ্রদ হতে খুব অগভীর"।

         

      লেকের আকৃতি ডিম্বাকৃতির এবং সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ যথাক্রমে 26 কিমি এবং 13 কিমি। হ্রদের গভীরতা 0.5 থেকে 4.58 মিটার এবং রেকর্ড করা গড় গভীরতা 2.7 মিটার। হ্রদের দক্ষিণ অংশে বিভিন্ন আকার এবং উচ্চতার 14 টি পাহাড় রয়েছে, যেগুলি দ্বীপ হিসাবে উপস্থিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সেন্দ্রা, ইথিং এবং থাঙ্গা দ্বীপ।

মণিপুরের মানুষ সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশগতভাবে লোকটাক হ্রদ এবং কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যানের সাথে যুক্ত। হ্রদটি অভ্যন্তরীণ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, সেচ, খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত অনেক উদ্ভিদের বাসস্থান, স্থানীয় মানুষের জন্য মাছ ধরার জায়গা, পশুখাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ, জীববৈচিত্র্য, বিনোদন ইত্যাদির জন্য জলের উৎস। তাই লোকটাক হ্রদকে 'মণিপুরের লাইফলাইন' বলা হয়।

             

      কেইবুল লামজাও সংরক্ষণ এলাকার আশেপাশে অবস্থিত গ্রামগুলিতে তিন ধরনের সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে, ফুম বাসিন্দারা (ফুমদিতে অস্থায়ীভাবে বা স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মানুষ), দ্বীপ সম্প্রদায় (দ্বীপে বসবাসকারী) এবং হ্রদের তীরে বসবাসকারী সম্প্রদায়।

      কেইবুল লামজাও ন্যাশনাল পার্ক (কেএলএনপি) "প্রাকৃতিক আদিমতা, বৈচিত্র্য, সৌন্দর্য এবং মানব স্নেহ" এর একটি অত্যাশ্চর্য গল্প উপস্থাপন করে। বিশ্বের একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান হচ্ছে - এটি কীভাবে মানুষ এবং বন্যপ্রাণী পরস্পর সংযুক্ত এবং কীভাবে এই পরস্পর নির্ভরতা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাহায্য করতে পারে সে সম্পর্কে একটি অমূল্য পাঠ শেখায়৷

হাইড্রোলজিকাল বৈশিষ্ট্য:

            এই অঞ্চলের জল-আবহাওয়া সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলি ভারতীয় গ্রীষ্মমন্ডলীয় বর্ষার আধিপত্য দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 1,183 মিমি (46.6 ইঞ্চি), জুলাই এবং আগস্ট সবচেয়ে আর্দ্র মাস এবং ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ সবচেয়ে শুষ্ক মাস। পার্কের আকার ঋতুভেদে পরিবর্তিত হয় কারণ এটি ফুমডিস (জৈব পদার্থের জলাভূমি) দ্বারা গঠিত। শুষ্ক ঋতুতে হ্রদের পেরিফেরাল অঞ্চলগুলি হ্রদের বিছানায় হিমায়িত হয়, তবে বর্ষা মৌসুমে কিছু দিনের জন্য প্রায় সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত হয়ে যায়। এটি আবির্ভূত হয় এবং কিছু দিন পর মাটি থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং সম্পূর্ণভাবে ভূপৃষ্ঠে ভাসতে থাকে; ফুমদির গভীরতা 1 ফুট (0.3 মিটার) থেকে 4 ফুট (1.2 মিটার) পর্যন্ত এবং এই সময়ের মধ্যে পার্কের প্রাণীরা উঁচু পাহাড়ি এলাকায় চলে যায়। এর পুরুত্বের প্রায় বিশ শতাংশ হ্রদের পৃষ্ঠের উপরে ভাসমান, বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ওজনকে সমর্থন করে। প্রধানত আর্দ্র আধা-চিরসবুজ বনের সমন্বয়ে গঠিত পার্কটিতে জলজ, জলাভূমি এবং স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের সমৃদ্ধ মিশ্রণ রয়েছে।